নরমুণ্ড শিকারী-

 নরমুণ্ড শিকারী-

pic source :-  internet


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন বিমানবাহিনীর কোন এক সদস্য ছবিটি তুলেছিলেন। তবে নাগাল্যান্ডের কোন জায়গায় ছবিটি তোলা হয়েছিল, তা জানা যায়নি। নাগাল্যান্ডের এই বিশেষ জাতিটিই ভারতের একমাত্র নরমুণ্ড শিকারী জাতি বলে পরিচিত। এঁরা 'কোন্যাক' জাতি (Konyak tribe) নামে পরিচিত। বর্তমানে নাগাল্যান্ডে এঁদের জনসংখ্যা হল - আনুমানিক ২ লক্ষ ৩০ হাজারের মতন। যেহেতু ভারত-ব্রহ্মদেশ সীমান্তে এঁরা বসবাস করেন, সেহেতু এই ছবিটি সেখানেই হয়ত তোলা হয়েছিল। আফ্রিকা মহাদেশে বেশ কয়েকটি নরমুণ্ড শিকারী জাতির উপস্থিতর কথা জানা গেলেও, এশিয়া মহাদেশে একমাত্র এঁদের কথাই জানা যায়। তবে অতীতে এঁরা সবসময় মানুষের মুণ্ডু কেটে বেড়াত না।

মূলতঃ দুটো সময়ে এঁদের নিজেদের মধ্যে মানুষের মুণ্ডু কেটে নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলত। প্রথমটা হল, এঁদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত বিপক্ষের এঁরা মুন্ডু কেটে নিয়ে নিজের সংগ্রহে রেখে দিত। যাঁর কাছে যত কাটামুন্ডু জমত, সে এঁদের সমাজে ততবড়ো বীর বলে সন্মান পেত। দ্বিতীয় যে সময় এঁরা মুণ্ডু কেটে বেড়াত, সেটা ছিল - এঁদের বিয়ের সময়। এঁদের সামাজিক সামাজিক নিয়ম অনুসারে, পাত্রকে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে, পাত্রীর কাছে মানুষের কাটা মুণ্ডু জমা দিতে হত। আবার অনেক সময়, এক নারীকে বিবাহ করার জন্য বহু পাত্র হয়ে গেলে, সেই পাত্ররা নিজেদের মধ্যে কে কতগুলো মানুষের কাটামুণ্ডু জোগাড় করতে পারে, সেটার প্রতিযোগিতা চালাত। অনেকটা স্বয়ম্বরের মতন, প্রতিযোগিতায় যে জয়ী হত, অর্থাৎ যে পাত্র সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় মানুষের মুন্ডু কেটে দেখাতে পারত, পাত্রী তাঁকেই বিয়ে করত। এক সময় এঁদের মধ্যে এই মুণ্ডু সংগ্রহ করার প্রতিযোগিতা এতটাই বেশি পরিমানে বেড়ে গিয়েছিল, যে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারকে এঁদের দমন করার জন্য বলপ্রয়োগ ও মুণ্ডু কাটার প্রতিযোগিতাকে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করতে হয়েছিল। এঁরা এখনো নাগাল্যান্ডে আছেন, তবে কারো মুন্ডু কাটেন না। এঁদের অনেকের বাড়িতে এখনো এঁদের পূর্বপুরুষদের সংগ্রহ করা মানুষের কাটামুণ্ডুও স্মারক হিসেবে সংরক্ষিত করা আছে। 

 তথ্যসূত্র - ইতিহাস  ও মিথোলজি।


0/Post a Comment/Comments